এই সময় ত্বক যেমন আর্দ্রতা হারায়, তেমনি চারপাশের পরিবেশও শুষ্ক হয়ে
পড়ে। ধুলাবালুর পরিমাণও বেড়ে যায়। ধুলাবালুর সঙ্গে অ্যালার্জেন মিশে থাকে।
এগুলো শ্বাসনালির ভেতর ঢুকে যায় বা ত্বকের ওপর বসে পড়ে। তাই শীতের সময়
অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যায়। আবার কারও থাকে কোল্ড অ্যালার্জি।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ঠান্ডা বাতাস, সিগারেটের
ধোঁয়া, সুগন্ধি, তীব্র গন্ধ, পুরোনো পত্রিকা বা বইখাতার ধুলা অনেকেই
একেবারে সহ্য করতে পারেন না। এসবের উপস্থিতিতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা
অ্যাজমা, সর্দি ইত্যাদি দেখা দেয়। এসব বিষয়কে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়
অ্যালার্জেন বলা হয়। প্রচণ্ড শীতও অনেকের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে।
এ কারণে সৃষ্ট উপসর্গকে কোল্ড অ্যালার্জি বলা হয়।
কোল্ড অ্যালার্জি থেকে বাঁচার উপায়
ঠান্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একধরনের মুখোশ
(ফিল্টার মাস্ক) বা মুখবন্ধনী ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ফ্লানেল কাপড়ের
তৈরি এবং মুখের অর্ধেকসহ মাথা, কান ঢেকে রাখে। ফলে ব্যবহারকারীরা উত্তপ্ত
নিশ্বাস গ্রহণ করতে পারেন। উপসর্গ নিরসনে ওষুধ নেওয়া যেতে পারে।
শ্বাসকষ্টের জন্য বহুলাংশে দায়ী যেমন ধুলাযুক্ত জীবাণু, মোল্ড, পরাগরেণু
থেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।
বিছানা ও আসবাবপত্রে অ্যালার্জি
এই সময়ে বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, বালিশ, লেপ, তোশক,
ম্যাট, কম্বল, মশারিতে ধুলাযুক্ত জীবাণু বেশি জমে। আমাদের শরীরের ত্বক থেকে
প্রতিনিয়ত ঝরে যাওয়া অসংখ্য মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে এই জীবাণু। এরা
প্রতিনিয়ত প্রচুর বিষ্ঠা ত্যাগ করে। ঘরদোর, বিছানা যখন ঝাড়ু দেওয়া হয় তখন
এই বিষ্ঠাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। ধুলাযুক্ত
জীবাণুর বিষ্ঠাই আমাদের অনেকের শরীরে অ্যালার্জি আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ।
বিছানার ধুলাযুক্ত জীবাণু থেকে পরিত্রাণ পেতে বিছানার চাদর, বালিশের কাভার,
লেপের কাভার, মশারি ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ঘরের চারপাশে ঝাড়ু দিয়ে মেঝে পানি ও ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার
করলে অ্যালার্জেন থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। প্রতিদিন উঠোনে বা ব্যালকনিতে
আসা রোদে লেপ, কম্বল, কাঁথা, তোশক ম্যাট্রেস শুকিয়ে নেওয়া উচিত। রোদের
অতিবেগুনি রশ্মিতে ধুলাযুক্ত জীবাণু মরে যায়। বাসাবাড়িতে চেয়ার, টেবিল,
সোফা, খাট, আলমারি, কাপবোর্ড, কাঠের বিভিন্ন আসবাবপত্রের ফাঁকে ফাঁকে
ধুলাবালুর জীবাণু থাকে। অ্যালার্জি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন এসব আসবাবপত্র
ঝাড়া-মোছা করা প্রয়োজন।
ছত্রাক
ঘরের স্যাঁতসেঁতে অংশ যেমন: বাথরুম, স্টোররুম, বেসমেন্ট
ইত্যাদি স্থানে ছত্রাক বা ছাতা পড়ে। বায়ুবাহিত ছত্রাকের কারণে অ্যাজমা বা
হাঁপানি হতে পারে। মাথার খুশকির অন্যতম কারণ ছত্রাক, সেই খুশকি থেকেও
অ্যালার্জি হতে পারে।
নিজের ঘর ছত্রাকমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া
উচিত। তাই বাসার পানি চলাচলব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো স্থানে
ছত্রাক জন্মালে পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে তা পরিষ্কার করে স্থানটি ভালোভাবে
শুকিয়ে নিতে হবে।
কার্পেট, ম্যাট
ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে এবং শীতের সময় ঘর উষ্ণ রাখতে
মেঝেতে নামীদামি কার্পেট ও ম্যাট বিছিয়ে রাখেন অনেকে। কিন্তু এই কার্পেট ও
ম্যাটে প্রতিদিন প্রচুর ধুলাবালু ও ময়লা জমে। এই ময়লা থেকে জন্ম নেওয়া
ডাস্ট মাইট বিশেষ করে শিশুরা ম্যাটে ও কার্পেটে বসে থাকে, খেলাধুলা করে, যে
কারণে তারা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয় এবং বাধিয়ে ফেলে নানান অসুখ। ধুলা
এড়াতে প্রায় প্রতিদিনই ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করা দরকার। যদি
ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হাতের কাছে না থাকে তাহলে ছাদে নিয়ে ম্যাট ও কার্পেট
ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। পরিষ্কার করা ম্যাট ও কার্পেট মেঝেতে
বিছানোর আগে মেঝে ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
দরজা, জানালা ও পর্দা
বাসাবাড়িতে দরজা-জানালায় প্রতিদিন প্রচুর ময়লা জমে। সেই
সঙ্গে দরজা, জানালার পর্দার ভাঁজে ভাঁজে জমা হতে থাকে ধুলাযুক্ত জীবাণু।
পর্দা নাড়াচাড়া করার পর ধুলা নাকে-মুখে প্রবেশ করে মানুষের মধ্যে
অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। প্রায় প্রতিদিন দরজা-জানালা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
এক সপ্তাহ পরপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে মোটা কাপড়ে
তৈরি পর্দা মাঝেমধ্যে ধুয়ে নেওয়া দরকার এবং প্রতিদিন ঝেড়ে নেওয়া প্রয়োজন।
পোষা প্রাণী থেকে
অনেকেই বাসাবাড়িতে বিড়াল, কুকুর, ভেড়া, ছাগল, ময়না, টিয়া,
ঘুঘুসহ নানান জাতের পশুপাখি পুষে থাকেন। অনেকে হয়তো জানেন না অতিপ্রিয় পোষা
এই প্রাণীদের শরীরে প্রতিদিন ধুলাযুক্ত জীবাণু জন্মে এবং তাদের শরীরের লোম
থেকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। পশুপাখির মলমূত্র ও লালা থেকেও সৃষ্টি হয়
অ্যালার্জি। পশুপাখিদের প্রতিদিন না হলেও দু-এক দিন পরপরই গোসল করিয়ে দেওয়া
প্রয়োজন। গোসলে যদি সাবান ব্যবহার করা যায় তাহলে অনেক ভালো হয়। পশুপাখি
যখন মলমূত্র ত্যাগ করে তখন তা যেন পাত্রে করে, এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
পশুপাখি যে জায়গায় থাকে সেই জায়গাটা প্রতিদিন পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন।
শিশুদের খেলনা, জুতা, ফ্যান, এসি, ঝাড়বাতি ও বিভিন্ন
শোপিসে ধুলোবালু জমে জন্ম নেয় অ্যালার্জি। এসব শখের জিনিস ভালোভাবে একদিন
পরপর পরিষ্কার করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
লেখক: চিকিৎসক
0 comments: