এই উপসর্গকে যাকে বেসবল খেলোয়াড় চার্লি ‘হস’ র্যাডবোর্নের নামানুকরণে ‘চার্লি হস’ বলে অভিহিত করা হয়। দিনের শেষে যেটাই হোক না কেন, করণীয় কী, বিস্তারিত জানান হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা।
কেন হয়:
প্রথম এবং সবচেয়ে ‘কমন’ কারণ হল এক্সারসাইজ। গরমে অনেকটা সময় ধরে শারীরিক কসরত করার পর মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প ধরতে পারে। এর প্রধান কারণ অত্যধিক কসরতের পর মাংসপেশীগুলো এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার উপর আবার ‘ডিহাইড্রেটেড’ বা ‘পানিশূন্য’ও হয়। শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামজাতীয় ইলেক্ট্রোলাইটসের ঘাটতির ফলে মাসলে ক্র্যাম্প ধরে। এর পাশাপাশি গর্ভাবস্থাতেও ক্র্যাম্প ধরার প্রবণতা থাকে। তৃতীয় ফ্যাক্টর বয়স। বয়স বাড়লে মাংসপেশী এমনিতেই অল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার উপর আবার সেই সময় শরীরে তরল পদার্থর সামান্য অভাব বোধ হলেই বয়স্ক, অবসন্ন মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প ধরে। এছাড়াও কোনও কোনও ক্ষেত্রে উচ্চ কোলেস্টরল প্রতিরোধে ব্যবহৃত স্ট্যাটিনের মতো ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ক্র্যাম্প হয়।
এমনিতে মাসল ক্র্যাম্পে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু তবু যদি ক্র্যাম্প বার বার হয় এবং প্রতিবার প্রচণ্ড টান ধরে, যা আপনাকে কার্যত অচল, অসাড় করে দেয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাসল ক্র্যাম্প এমনি এমনিই সেরে যায়। ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে দু’টো জিনিস করতে পারেন। এক, পা স্ট্রেচ করুন। আর দুই, যে মাসলে ব্যথা, হালকা হাতে সেখানে ম্যাসাজ করুন। প্রয়োজনে তাপ প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। কোনও হিটিং প্যাড বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। আর ভবিষ্যতে ক্র্যাম্প যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ গ্রহণ করুন, এক্সারসাইজ করার আগে। প্রত্যেকবার ওয়ার্ক আউট করার পর পা স্ট্রেচ করুন মিনিট কয়েকের জন্য। আবার শোওয়ার আগেও পা স্ট্রেচ করার অভ্যাস ঝালিয়ে নিতে পারেন, যাতে ঘুমের মধ্যে ক্র্যাম্প না ধরে। খুব সমস্যা হলে সাইক্লোবেনজাপ্রিন (ফ্লেক্সিরিল), মেটাক্সালোন (স্কেলাস্কিন) বা মেথোকার্বামোলের (রোবাক্সিন) মতো মাসল রিলাক্স্যান্ট ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
পায়ের সব টানকেই ক্র্যাম্প ভেবে ভুল করবেন না। আর তার মতো চিকিৎসাও করাবেন না। যেমন ব্যয়াম, শারীরিক কসরত করতে করতে হঠাৎ কাফ মাসলে ব্যথা হলে তা ক্র্যাম্প না-ও হতে পারে। হতে পারে সেটা হচ্ছে আথরোক্লেরোসিসের জন্য হচ্ছে।
কীভাবে বুঝবেন :
যদি পায়ে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে রক্তপ্রবাহে ব্লকেজ দেখা দিয়েছে, গায়ের চামড়া ক্রমশ ফ্যাকাসে হয়ে পড়ছে, তবে বুঝবেন সেটা ক্র্যাম্প নয়। আবার কখনও পায়ে টান ধরার পাশাপাশি যদি তা সারহীন মনে হয়, জ্বলুনি লাগে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসককে দেখান। হতে পারে, সেটা ডায়াবিটিসের জন্য হচ্ছে। আর যদি কখনও পা অস্বাভাবিক রকম ফুলে যায়, দ্রুত সাবধান হন। কারণ এই উপসর্গ হার্ট, লিভার এবং কিডনির অসুখের লক্ষণ। মনে রাখবেন, মাসল ক্র্যাম্প এমনিতে বিপজ্জনক নয়। কিন্তু হওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে কমে না গেলে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যা তৈরি করলে সাত-পাঁচ না ভেবে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। একমাত্র তাদের দেওয়া পরামর্শই মেনে চলুন।
0 comments: