আবহাওয়ার পরিবর্তন নিশ্চয়ই খেয়াল করছেন? বেশ কিছুদিন ধরেই তাপমাত্রা
কমতে শুরু করছে। হালকা শীত শীত ভাব। গরম কাপড় গায়ে উঠছে। রান্নাঘরেও
পরিবর্তন আনার সময় চলে এসেছে। যাঁরা নিয়মিত বাজার করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই
বাজারে শীতের শাক-সবজি দেখতে পাচ্ছেন।
শীতের শুরুতে শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত শাক সবজি খেতে পারেন। শীতের
সবজিতে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় খনিজ আছে, তা শরীর
সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। এতে রোগবালাই কম হবে। শীতের শুরুতে কয়েক ধরনের
সবজি খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত। সে ধরনের কয়েকটি সবজি সম্পর্কে জেনে
নিন:
গাজর: গাজর!
এই সবজির মধ্যে যে কতগুণ আছে, তা যদি আপনি জানতেন, তবে সকাল, বিকেল, রাত
যে খাবারই খান না কেন, তাতে গাজর থাকাটা বাধ্যতামূলক করে দিতেন নিশ্চিত।
গাজরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি, তা হলো দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো। গাজরে
দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ থাকে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের
খাদ্যতালিকায় এ সময় অবশ্যই গাজর রাখা উচিত। শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক
একটি উপাদানের কারণে বয়সের ছাপ চলে আসে। গাজরের মধ্যে যে ক্যারটিনয়েড থাকে,
তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে
বয়সের ছাপ আসার গতিকে ধীর করে।
এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৩৩ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’, ৯ শতাংশ ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫ শতাংশ ভিটামিন ‘বি-৬’ পাওয়া যায়। এটি শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস ও বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজরের জুসে ভিটামিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যে সব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান। চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে।
মেথি: শীত একটু একটু করে আসছে। বাড়ছে সর্দিকাশিও। নিয়মিত মেথি খেলে
সর্দিকাশি পালাবে। শীতের শুরুতে যাঁরা পেটের সমস্যায় পড়েন, তাঁদের জন্য
মেথি দারুণ উপকারী। এতে আয়রন, ভিটামিন ও প্রয়োজনীয় খনিজ আছে। মেথিকে মসলা,
খাবার, পথ্য—তিনটিই বলা চলে। স্বাদ তিতা ধরনের। লেবু ও মধুর সঙ্গে এক
চা-চামচ মেথি মিশিয়ে খেলে জ্বর পালাবে। মেথিতে মিউকিল্যাগ নামের একটি
উপাদান আছে, যা গলাব্যথা সারাতে পারে। অল্প পানিতে মেথি সেদ্ধ করে সেই পানি
দিয়ে গড়গড়া করলে গলার সংক্রমণ দূর হয়। এতে রয়েছে রক্তের চিনির মাত্রা
কমানোর বিস্ময়কর শক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখার বিস্ময়কর এক ক্ষমতা। যাঁরা
নিয়মিত মেথি খান, তাঁদের বুড়িয়ে যাওয়ার গতিটা অত্যন্ত ধীর হয়।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। বিশেষত কৃমি মরে। রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। ডায়াবেটিসের রোগী থেকে শুরু করে হৃদ্রোগের রোগী পর্যন্ত সবাইকে তাঁদের খাবারে মেথি রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেথির গুণাগুণ দেখলে একে অন্যতম সুপার ফুড বলা চলে। মেথিতে আছে প্রাকৃতিক তন্তু, যা ওজন কমাতে বেশ কার্যকর। দিনে দুই-তিনবার মেথি চিবাতে থাকলে বেশি না খেলেও পেট ভরা মনে হবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা মেথি কাজে লাগাতে পারেন।
পালং: শীতে অনেকের প্রিয় সবজি পালং
। পালংশাকের স্বাদ নেওয়ার সময় তো এখনই। অন্যান্য সবুজ সবজির চেয়ে এতে
দ্বিগুণ আঁশ বা ফাইবার থাকে। এতে ভিটামিন এ, সি, কে, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ও
ম্যাংগানিজ আছে। এতে আছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান। এর মধ্যে একটি হলো
ফলেট। এটি মানুষের শরীরে নতুন কোষ তৈরি ও ডিএনএ মেরামতে ভূমিকা রাখে। এ
ছাড়া আঁশ ও ভিটামিন সি-এর মতো বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎস পালং শাক।
তবে পুরো সুফল পেতে হলে হালকাভাবে রান্না করা পালং শাক খাওয়াই ভালো।
পুষ্টিতে ভরপুর পালংয়ের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ক্যনসার প্রতিরোধী গুণের
কারণে এটি ‘সুপারফুড’ হিসেবে পরিচিত। সবুজ পাতার এ শাক দ্রুত পেটের চর্বি
কমাতে পারে। পালংয়ে ভিটামিন ও মিনারেল আছে, এতে ক্যালরি থাকে কম। তাই ওজন
কমাতে খাবারে বেশি করে পালং রাখতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের ওজন
বেশি তাঁরা নিয়মিত পালং খেলে বাড়তি ওজন কমে যায়।
মুলা: মুলা! নাম শুনেই অনেকে চোখ কোঁচকান। অনেকেই মুলা
খেতে চান না। কিন্তু মুলায় মেলে নানা উপকার। তরকারি হিসেবে বা সালাদে
নানাভাবে মুলা খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদেরা বলেন, মুলার মেলা পুষ্টিগুণ। যকৃৎ ও
পাকস্থলী পরিষ্কারে মুলার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত তাই খাবার টেবিলে মুলা
রাখতেই পারেন। এতে আঁশ ও প্রচুর পানি থাকে। দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। যকৃৎ
ও পাকস্থলী বিষমুক্ত করতে পারে মুলা। মুলা সাদা, লাল বা কালো রঙের হতে
পারে। শীতকালে সাদা মুলা সহজে চোখে পড়ে। এ মুলায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে, যা
শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কালো রঙের মুলা ও এর পাতা অনেক দিন ধরে
জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুলায় যে উপাদান আছে, তা রক্ত শোধনে
সহায়তা করে। মুলায় আছে প্রচুর সালফার।
সরিষা শাক: বাজারে এখন চোখে পড়বে সরিষা শাক।
শীত মৌসুমে অনেক বাড়িতেই সরষে শাকের বেশ কদর রয়েছে। সরষে ফুল দিয়ে উপাদেয়
বড়া হয়। সরিষা ওজন কমাতে সাহায্য করে। সরিষা শাকে ওজন কমাতে সহায়ক ভিটামিন
সি ও আঁশ থাকে। এ ছাড়া এতে আয়রন, পটাশিয়াম ও ম্যাংগানিজ আছে। কোষ্ঠকাঠিন্য
থেকে মুক্তি পেতে সরিষা কাজে লাগে।
বিট: বিটে কোনো চর্বি নেই বা একেবারে ক্যালরি কম। শরীর ফিট বা ঠিক রাখতে চাইলে খাদ্যতালিকায় বিট
রাখতে পারেন। যাঁরা এই শীতের মৌসুমেও সতেজ ত্বক চান, তাঁদের জন্য সেরা
শীতের সবজি এই বিট। শরীরে ক্ষতিকর উপাদান বা বিষমুক্ত করার বিশেষ উপাদান
আছে বিটে। বিটে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন বি৬, এ, সি,
নাইট্রেট আছে। শরীরকে সুস্থ রাখার নানা উপাদান থাকায় শীতের সবজি হিসেবে বিট
খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে নিয়মিত বিট খেতে
পারেন। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি, তাঁরা বেশি করে বিট
খাবেন। এতে প্রদাহবিরোধী উপাদান থাকায় বিটের জুস নিয়মিত খেলে মুখে ব্রণের
সমস্যা দূর হয়। এনডিটিভি অনলাইন অবলম্বনে
0 comments: