শীত এলেই ছোট থেকে বড় অনেকের মধ্যেও সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন বড়রা। ছোটদের মধ্যেও দেখা যায় পেট খারাপ, নিউমোনিয়া, চর্মরোগ। শীতের এসব অসুখ থেকে রেহাই পাওয়ার কয়েকটি উপায় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক মো. কামরুল হাসান।
বছরে প্রায় ১০ মাস আমরা গরম আবহাওয়ায় থাকি। হঠাৎ করে শীত এলে এক বা দুই মাসে আমরা অভ্যস্ত হতে পারি না। এ ছাড়া এ সময় বাতাসে প্রচুর ধুলাবালু থাকে। ঘাসের ও ফুলের রেণু থাকে। বৃষ্টি হয় না বলে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। শীতে মশা বেড়ে যায় দেখে কয়েল জ্বালানো হয়। কয়েলের ধোঁয়াও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এসব কারণে চর্মরোগ, সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় শরীরে।
একটু সচেতন থাকলে রেহাই পাওয়া যায় এসব সমস্যা থেকে। ঠান্ডা লাগা থেকে অনেক সময় শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। হালকা জ্বর, বাচ্চার খেতে না চাওয়া, বুকের পাঁজরের মধ্যে চামড়া বা মাংস ঢুকে যাওয়া নিউমোনিয়ার লক্ষণ। এই অসুখ হলে শিশু প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস নেবে। তখন বুঝতে হবে এটি সাধারণ ঠান্ডা লাগার সমস্যা নয়। এ রকম হলে শিশুকে নিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
শ্বাসকষ্ট হলে শিশু সারা রাত কান্নাকাটি করবে। শুয়ে থাকতে পারবে না, বসে থাকবে। নেবুলাইজার বা ইনহেলার ব্যবহার করলে শিশু ভালো থাকে। তবে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট শুধু শীতকালীন রোগ না। শীতকালে এর প্রকোপটা বেশি হয়।
শীতে ঘাম কম হয়। তাই চর্মরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তবে শীতের আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে পারে। অলিভ অয়েল বা লুব্রিকেন্ট-জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই মেলে। শীতকালে মাথায় প্রচুর খুশকি দেখা যায়। শরীরের অন্যান্য জায়গার মতো মাথার ত্বকে কিন্তু আমরা লোশন বা এ রকম কিছু মাখি না। তাই অন্য সময়ে যদি মাথায় আমরা সপ্তাহে দুবার শ্যাম্পু ব্যবহার করি, শীতকালে করা উচিত চার বা পাঁচবার। তাহলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু শীতে আমরা অনেক সময় তাড়াতাড়ি গোসল সারতে গিয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করি কম। মাথার খুশকি মুখে পিঠে পড়ে এর প্রকোপে ব্রণও দেখা দিতে পারে।
ছয় মাসের কমবয়সী শিশুর ঘর বিকেল থেকেই বন্ধ রাখলে, ধুলাবালু মুছলে ঘরে ময়লা জমবে না। শিশুকে খুব বেশি ভারী জামাকাপড় পরিয়ে রাখা উচিত না। এতে তার ঠান্ডা লাগতে পারে।
শীতকালে শিশু ঘন ঘন প্রস্রাব করে। তারা ভিজে থাকলেও মা টের পান না। এতে ঠান্ডা লেগে যায়। ফলে শিশুকে ডায়াপার পরানো উচিত। এ ছাড়া অলিভ অয়েল দিয়ে শিশুকে মালিশ করানো যেতে পারে। লোশন ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, লোশনে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। অলিভ অয়েলটা ত্বকে আলাদা আস্তর তৈরি করে। ফলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। টাইলসের ওপর বসে থাকলেও শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। মেঝেতে ধুলাবালু জমে থাকলে শিশুরা সেটি খেয়ে ফেলে। তাই টাইলসের বদলে ম্যাট ব্যবহার করা ভালো।
সাধারণ ঠান্ডার ওষুধ বারবার খাওয়ানো নিয়ে চিন্তায় থাকেন মা-বাবা। কিন্তু সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো এসব ওষুধ খাওয়াতে হবে। না হলে প্রকোপ আরও বাড়তে পারে।
গ্রামের মায়েরা পানি রোদে দিয়ে গরম করেন। এটা খুব একটা ভুল পদ্ধতি। একটা গামলায় যদি ১০ ইঞ্চি গভীরতায় পানি থাকে, রোদে দিলে শুধু ওপরের এক ইঞ্চি পরিমাণ পানি গরম হতে পারে। নিচের পানিটা কিন্তু ঠান্ডাই থাকে। এ রকম পানিতে গোসল করানো হলে বাচ্চাদের ঠান্ডা লেগে যায়। এমন না যে তিন দিন পর গোসল করাতে হবে, যদি কুসুম গরম পানির ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে প্রতিদিন আপনি বাচ্চাকে গোসল করাতে পারেন।
শীতকালে যেহেতু ঠান্ডা লেগে থাকে, এর ফলে নাকের ময়লা শক্ত হয়ে যায় ভেতরে। শিশুরা হাত দিয়ে এটা পরিষ্কার করতে গেলে নাকে ক্ষত তৈরি হতে পারে। এর ফলে রক্ত পড়তে পারে। অনেক সময় শিশুরা কান চুলকায়। মাথার খুশকি কানে ঢুকে গেলে কান চুলকাতে পারে। শিশুরা কাঠিজাতীয় শক্ত কিছু দিয়ে কান চুলকালে ক্ষত হতে পারে। রক্ত পড়তে পারে। তাই সচেতন থাকতে হবে।
0 comments: