Thursday, December 15, 2016

শ্রান্ত, ভারাক্রান্ত মনকে নির্ভার করে তুলতে যোগাসন জুড়িহীন

জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ                  
আমার কাছে ফিটনেসই হল স-‌ব!‌ জীবনে চলার পথ। ভালোবাসারও পথ। এককথায় জীবনের সেরা মন্ত্র। আমার চতুর্দ্দিকে কী ঘটছে তা আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারি যদি ফিটনেসের তুঙ্গে রাখতে পারি নিজেকে। একটুও বাড়ানো কথা নয় বরং এটাই আমার উপলব্ধি। নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার, নিজের ওপর বিশ্বাসটা বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে আমি ফিটনেসকেই সর্বাগ্রে রাখতে চাই। মোদ্দা কথায়, আমাকে কেউ যদি ‘‌ফিটনেস ফ্যানাটিক’‌ বলে একটুও রাগ করব না। বরং চুপি চুপি বলে রাখি বেশ ভালোই লাগবে!‌


আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলা কী জানেন?‌ রানিং। দৌড়তে সত্যিই খুব ভালোবাসি। তবে এটা কিন্তু ভেবে বসবেন না যে দৌড়তে ভালো লাগে বলেই ম্যারাথনে নামার কথা ভেবে বসে আছি!‌ অতটাও নয়। তবে ইচ্ছে যে একটা রয়েই গিয়েছে মনে মনে তা অস্বীকার করব না। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়। দৌড়নর কথা উঠলেই প্রথম যে ভাবনাটা মাথায় আসে তা হল ভালো জুতো। যা পায়ের পক্ষে শুধু আরামদায়কই হবে না পা’‌কে আগলেও রাখবে। ব্যাপারটা কিন্তু ভীষনই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই অবহেলা করেন। করবেন না, প্লিজ!‌ ফিটনেস তত্বে ভালো এবং উপযুক্ত জুতোজোড়া বড় ভূমিকা নিতেই পারে। এখন উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি জুতোগুলো দামি হলেও অনেক বেশি আরামদায়ক। এবং অগুন্তি মডেলের থেকে নিজের পছন্দেরটি বেছে নেওয়ার সুযোগও আমরা পেতে পারি। আর ওগুলো দেখতেও এক্কেবারে ঝক্কাস!‌ সুতরাং, ফিটনেস ফ্যানাটিক যে কারোর পায়ের জুতো হয়ে উঠতেই পারে আলাদা আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।
ইদানীং কমবয়সী মেয়েদের মধ্যেও নিজেদের ফিট রাখার ব্যাপারে আগ্রহটা অ-‌নে-‌ক বেড়েছে। তবে, একটা কথা বুঝতে পারি না, শরীরের ওজন কমানোর জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠকেই দেখি অহেতু ডায়েট নিয়ন্ত্রন করছে। কেন রে বাবা!‌ একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখো তোমরা, এক্সারসাইজ ছাড়া শুধু ডায়েট কন্ট্রোল করে কিচ্ছু হবে না!‌ বরং এতে শরীরে ক্ষতিই হবে বেশি। না খেয়ে খেয়ে শরীরকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার তো কারোর নেই। থাকতে পারে না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর সেই সঙ্গে রোজ শরীরচর্চা করে ঘাম ঝরানো-‌ এই দুইয়ের যুগলবন্দীই কেবলমাত্র পারে শরীরকে ‘‌তন্দুরস্ত’‌ করতে!‌ শুধু শুধু খাওয়া-‌দাওয়া কমিয়ে রোগাসোগা হলাম আর আয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রূপে নিজেই মোহিত হলাম এতে আর যাই হোক ফিটনেস বাড়ে না!‌


একটা কথা সকলেরই মাথায় রাখা উচিত বয়সের ছাপ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরে একটা সময় পড়বেই। ডায়েট নিয়ন্ত্রন করে যারা সুন্দর, চকচকে হতে চায় তারাও এর কবল থেকে মুক্ত হবে না। ফলে শরীর তখন আরও ভাঙবে। সেজন্যই বারবার বলছি ঘাম ঝরানোর কথা, নৈমিত্তিক শরীর চর্চার কথা। বয়স বাড়লে মুখচোখে স্বাভাবিক ছাপ হয়ত পড়বে কিন্তু শরীরটা ভেতর থেকে মজবুতই থাকবে। ভেঙে পড়বে না। বাড়তি একটা ঔজ্বল্য সেই রয়েই যাবে। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘‌গার্ল পাওয়ার’‌ আমি তার প্রবলতম সমর্থক। মেয়েদের সবক্ষেত্রে এগিয়ে আসা, সমাজে তাদের বড় ভূমিকা নেওয়া এসমস্ত কিছুই আমার খুব পছন্দের একটা ‘‌সাবজেক্ট’‌। কেউ বলতে বললে অনেকটা বকবক করে দিতে পারি। এটাও বিশ্বাস করি যে, প্রত্যেক মেয়ে যদি আন্তরিকভাবে চায় তাহলে ফিটনেসের শীর্ষে নিজেদের নিয়ে যেতেই পারে।

সম্প্রতি ‘‌গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’‌ বইয়ে ঠাঁই করে নেওয়া একটা ঘটনার কথা জেনে খুব আশ্চর্য হলাম। পাতি বাংলায় যেটাকে ডন বৈঠক বলে ঠিক সেই কসরতটা ১ মিনিট ধরে টানা করে গিয়েছেন ১৬২৩ জন মেয়ে!‌ নারীশক্তির এর চাইতে বড় বিজ্ঞাপন আর কোথায় পাবেন?‌ বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘‌পিউমা’‌ ইভেন্টটির আয়োজন করেছিল। এবং যে বাগানে হয়েছিল সেখানে প্রায় তিল ধারনের জায়গা ছিল না।

আমি যখন প্রথম আপনাদের মুম্বইতে ছবির কাজ করতে এসেছিলাম তখন বেশ কাঠ কাঠ ছিলাম। প্রযোজক-‌ পরিচালকদের তেমন পছন্দ হয়নি। ওঁরা অনুযোগের সুরে বলেওছিলেন। আসলে ‘‌মিস শ্রীলঙ্কা’‌ কনটেস্টে নামার আগে প্রচুর ওয়ার্ক-‌আউট করতে হত। ট্রেডমিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে বেড়ানো, ওজন তোলা, স্কোয়াট করা-‌ এসবেরই নিটফল ছিল অমন হাড় বের করা কাঠখোট্টা চেহারা। না, এসব কিছু পড়েটড়ে আবার নিরুৎসাহিত হবেন না। আবার বলছি রোজ রোজ একেবারে নিয়ম করে শরীরচর্চা করাটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। আমি তো সকালবেলায় সাতটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে পড়ে এক কাপ চা খেয়েই ম্যাটে নেমে পড়ি। তা প্রায় ঘণ্টাখানেক ঘাম ঝরাই। সঙ্গে মিউজিক সিস্টেমটা চালিয়ে রাখতে ভুলি না। রক, পপ যা হয় তাই শুনি। যেদিন একটু বেশিই ঝরঝরে লাগে দিনে দুবার ওয়ার্ক -‌ আউট। মস্তি করে!‌
হালকা ওজন আপাতত তুলছি। পায়ের জন্য ব্যবহার করছি ভারি ওজন। যোগার ভূমিকাও বড় কম নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি হা-‌ ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মনকে সহজ, নির্ভার করে দিতে যোগাসন প্রায় জুড়িহীণ। একটা প্রবাদ সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। ‘‌একটা স্বাস্থ্যকর মন বসত গড়ে থাকে একটা স্বাস্থ্যকর শরীরেই মধ্যেই’‌। একদম খাঁটি কথা। এখন যা আরও বেশি করে বুঝতে পারি। হপ্তায় অন্তত তিনদিন ঘণ্টাদুয়েক করে যোগা করার পর উপলব্ধি করতে পারি মানবজীবনে ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা কতটা।

ঘামঝরানো ওয়ার্ক-‌আউটের পর কী খাওয়া যেতে পারে?‌ প্রশ্নটা অনেকেই আমাকে করেন। আমি নিজে ‘‌প্রোটিন শেক’‌ পছন্দ করি। আর লাঞ্চ টেবিলে বসার আগে খোঁজ নিয়ে নিই অল্প ভাতের সঙ্গে বিনস, স্যালাড আর আধসেদ্ধ সবজি এসবগুলো মেনুকার্ডে রয়েছে তো!‌ আসলে কখন যে ফিটনেসের ‘‌ভূত’‌টা মাথার মধ্যে গেড়ে বসেছে নিজেও বুঝতে পারিনি

SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: