Saturday, August 27, 2016

লিভ টুগেদারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নারীরা

প্রেমের সম্পর্কের তাগিদে বিবাহ বহির্ভূত বসবাস বা লিভ টুগেদার যতটা না মধুর পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করে, তার চেয়ে হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেয় বেশির ভাগ সময়। রাজধানীতে বিবাহ বহির্ভূত বসবাসটা এখন অনেকটায় ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।  আবার অনেকেই ঢাকা শহরে একটু ভালো থাকার জন্যও এমন পথ বেছে নিচ্ছেন, এ দাবি তাদের। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি বলে মনে করছেন সমাজ বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশে লিভ টুগেদারের বৈধতার পক্ষে প্রকাশ্যে কোনো দাবি না উঠলেও অনেকেই মনে করছেন এটা এখন সময়ের দাবি। তবে লিভ টুগেদারকে বৈধতা দিলে তা প্রচলিত আইনগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা।  বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে লিভ টুগেদারের ক্ষতির দিকটা নারীদের দিকেই বেশি আসছে। 

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই লিভটুগেদারকারী তরুণের চেয়ে তরুণীর প্রতিই খড়গহস্ত সবাই। সম্মানহানি ও সামাজিকভাবে হেয় হন তরুণীটিই। সমাজ বিজ্ঞানী ও নারী অধিকার কর্মীরা এমনটিই বলছেন।  ধানমণ্ডির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম রুমেল (ছদ্মনাম)। গ্রামের বাড়ি জামালপুর। প্রথম বর্ষ থেকেই চার বন্ধু মিলে ঝিগাতলায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেস করে বসবাস করতো। ২০১৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী সানজিদা তমার সঙ্গে (ছদ্মনাম) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রুমেলের।  

তমা প্রথমে ধানমণ্ডিতে একটি ছাত্রী নিবাসে বসবাস করলেও পরে প্রেমিক রুমেলের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটিতে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় বসবাস করে আসছেন। রুমেল জানায়, মেসে থাকা খাওয়া মিলে দুজনের যে খরচ হয় সেই একই খরচে তিনি তার প্রেমিকাকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করতে পারছেন।  রুমেলের দাবি, যেহেতু তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসেন এবং একটা সময় তারাই পরস্পরকে বিয়ে করবেন তাহলে একসঙ্গে বসবাস করায় কোনো সমস্যাও দেখেন না। 

তবে রুমেল ও তমার এমন লিভ টুগেদার সম্পর্কে কোনো পরিবারই অবগত না। রুমেল জানায়, তাদের মত অনেক সহপাঠীই এভাবে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের জানাতে গেলে, তারা বেঁকে বসবেন। তার চেয়ে বিয়ের সময় পরিবারের সম্মতিতে সেটা করা ভালো।  লিভ টুগেদার না করে বিয়ের মাধ্যমে এমন বসবাসে সমস্যা কোথায় জানতে চাইলে রুমেল বলেন, ‘আসলে এই মুহূর্তে বিয়ের প্রস্তুতি আমাদের কারোরই নেই। আমরা পড়ালেখা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করতে চাই। 

আর এখন বিয়েটা কোনো পরিবারই সমর্থন করবে না।’  বাংলাদেশে লিভ টুগেদার বৈধতা পাওয়া উচিত কিনা এমন মতামত জানতে চাইলে রুমেল বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশে লিভটুগেদার বৈধতা পেয়েছে। এখন আমাদেরও চিন্তা ভাবনা করা উচিত।’  তবে ছদ্মনামের এই যুবকের দাবির প্রতি একমত নন ঢাকা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ। তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো নিয়ে কাজ করছি। 

আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে লিভ টুগেদার করেছে কিন্তু একটা সময় দুজনের মধ্যে মতের বিরোধ ঘটায় সে সম্পর্ক স্থায়ী পরিণতির দিকে যায়নি।  অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী পরিচয় দেওয়া নারী তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলাও করেছেন। পরস্পরের সম্মতিতে তারা বসবাস করলেও একসময় এসে প্রেমিকা প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলাও করেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন একসঙ্গে বসবাস করেও পরে প্রেমিক প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে মেয়েটিকে বাধ্য হতে হয়েছে আইনের আশ্রয় নিতে।’  এ বিষয়ে কথা বলা হলে নারী অধিকার কর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফাহমিদা নাসরিন বলেন, ‘লিভ টুগেদারকে বৈধতা দিলে দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে। 

ধরেন যদি লিভ টুগেদার বৈধতা দিতে হয় তাহলে কোনো নতুন আইনের মাধ্যমে সেটাকে বৈধতা দিতে হবে।  বৈধতা পাওয়ার পর কোনো মেয়ে তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করতে পারবে না। তখন নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের বেশ কয়েকটি ধারা এই আইনের জন্য অকার্যকর হয়ে যাবে। আবার লিভ টুগেদার না করে ধর্ষণ করেও অনেক অপরাধী লিভ টুগেদার আইনের মিউচ্যুয়াল সেক্স দেখিয়ে রেহাই পেয়ে যেতে পারেন।’  

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমান উল্লাহ ফেরদৌস বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক, ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে লিভ টুগেদার বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখন পর্যন্ত আমরা লিভ টুগেদারের অনেক নেতিবাচক ঘটনা পাচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রচলিত অনেক আইনের সঙ্গে লিভ টুগেদার খাপ খায় না। আর লিভ টুগেদারে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন নারীরাই।

SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: