Monday, January 8, 2018

যত্ন নেওয়া চাই মনেরও...

ভালো ও মন্দ—দুটি মিলিয়েই আমাদের পথচলা। কখনো কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পেয়ে যাই হাতের নাগালে, আবার কখনো হয় উল্টোটা। পরিবার কিংবা প্রিয় মানুষটির সঙ্গে দূরত্ব আবার পড়াশোনা, চাকরির নানা ঝক্কি–ঝামেলা। সব মিলিয়ে নিজের মনটাকে খুশি রাখাই হয়ে পড়ে দুরূহ। কিন্তু তাই বলে তো এভাবে বসে থাকাও সম্ভব নয়। কথায় আছে, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’। ঠিক এমনটাই আমাদের বাস্তব জীবনেও। তাই ঝামেলা যতই আসুক, চেষ্টা করুন নিজেকে খুশি রাখার।
কিন্তু এত সব ঝামেলার মাঝে মন ভালো রাখা কি এতটাই সহজ?
এ জন্য মেনে চলতে পারেন বেশ কিছু উপায়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক এবং কাউন্সেলর অ্যানি বাড়ৈ জানান, ‘মন খারাপ বা বিষণ্ন হয়ে পড়া একটি স্বাভাবিক মানসিক আবেগ। কিন্তু এটি তখনই ক্ষতিকর হয়ে পড়ে, যখন এটি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। এর ফলে কিন্তু ব্যক্তি বাইপোলার ডিসঅর্ডার, হীনম্মন্যতায় ভোগা—এ রকম বেশ কিছু মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।’ এ জন্যই প্রয়োজন মন খারাপের এই আবেগটিকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা এবং এর সমাধান করা।
তিনি এ বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেন—
১. সমস্যা মেনে নিন
কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তাকে স্বাভাবিকভাবেই নিন। হয়তো আপনি পছন্দের বিভাগে ভর্তি হতে পারেননি কিংবা পরিবারের বিভিন্ন সংকট আপনার মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সময়টুকুর মধ্যে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন, কোনো সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। আপনার এই সমস্যাগুলো একদিন সামান্য মনে হবে।
২. নিজের কাজে মনোযোগী থাকা
এসব দিনে কার কাজ করতে ভালো লাগে? এদিকে আবার বসে থাকলে নিজেই পিছিয়ে পড়ছেন। তাই নিজেকে সময় দিন এবং পরিকল্পনাগুলো গুছিয়ে ফেলুন। হয়তো শুরুতে আপনার আগ্রহ থাকবে না। তাই নিজেকে এই সময় দেওয়া। এরপর না হয় নিজ উদ্যোগে গুছিয়ে সেভাবে কাজ করা শুরু করুন।
৩.
আবেগ প্রকাশ করুন প্রিয় কোনো বন্ধুর
আমরা হালকা বোধ করি যখন নিজের সমস্যার কথাগুলো কাউকে মন খুলে বলতে পারি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এর মধ্যেই কিন্তু অনেকটা মানসিক উদ্বেগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই কাছের কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করুন। এটাও খেয়াল রাখুন, যাঁর সঙ্গে আলোচনা করছেন, তিনি আসলেই আপনার বিশ্বাসের যোগ্য কি না।
৪. পছন্দের কাজগুলো
এত দিন ব্যস্ততার মধ্যে নিজের শখগুলো ভুলে ছিলেন। কটা দিন না হয় এই কাজগুলোর মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন। বই পড়া, গান শোনা কিংবা কোথাও ঘুরতে যাওয়া। বিশেষ করে একই পরিস্থিতির মধ্যে থাকার ফলে একঘেয়ে লাগে। তাই সময় করে কোথাও বেড়িয়ে পড়ুন এবং সেখানেই ধীরস্থিরভাবে পরিকল্পনা করুন।
৫.
নিজের জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা
নদীর ওপারেই যেন সকল সুখ—আসলে নদীর দুপারেই সমস্যা থাকে। হয়তো কারও সমস্যা আর্থিক আবার কারও পারিবারিক। তাই চেষ্টা করুন নিজের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার। অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের ছোটখাটো বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হোন।
৬. যোগব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন
সপ্তাহে দু–তিন দিন চেষ্টা করুন মেডিটেশন করার। প্রতিদিন সকাল কিংবা সন্ধ্যায় কিছু সময় হাঁটতে পারেন। এতে শরীর ও মন—দুটিই ভালো থাকবে। সেই সঙ্গে পরিমিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও পানীয় পান করুন।
৭. ভিন্ন কিছু করুন
প্রতিদিনের একই তালিকা থেকে কিছুদিন নিজেকে বিরত রাখুন। শুধু বিষণ্নতার ক্ষেত্রেই নয়, স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও প্রয়োজন। ভিন্ন কিছু রান্না করা, ছবি আঁকা এমনকি নিজের ঘরটা না হয় নতুন করে সাজিয়ে নিলেন।
৮. কিছু বিষয় যেতে দিন
সব সময় ‘হতেই হবে’ এমন মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। কিছু পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করুন। সব সময় প্রথম হয়েই যে আপনি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন এমন নয়, বরং হোঁচট খেয়েই দাঁড়াতে শিখুন।
তাই নিজেকে না হয় একটু সময় দিন! কিছুটা সময় প্রাণবন্ত থাকার!


SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: