Monday, January 8, 2018

বারবার যাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যায়

অনেকেই আছেন, যাঁরা একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারেন না বেশি দিন। কখনো একটা সম্পর্ক কিছুদিন রেখে আবার আরেকটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকে। যেভাবেই তাঁরা একটা সম্পর্কে জড়ান না কেন, বারবার তাঁরা ভাঙেন একটা করে নির্দোষ সম্পর্ককে, হয়তো কষ্ট দেন অন্য মানুষটিকে।
এই যেমন সামির (ছদ্মনাম) সঙ্গে ছবির (ছদ্মনাম) এক বছরের সম্পর্কটা ভালো চলছিল। দুজনের মাঝে মিলমিশ ছিল ভালো। কিন্তু অফিসের একটা কাজে মিহিরের (ছদ্মনাম) সঙ্গে সামির পরিচয় হওয়ার পর থেকেই ঝামেলার শুরু। মিহিরকে দেখে, তাঁর সঙ্গে দু-এক দিন কথা বলেই মিহিরের প্রেমে পড়ে যান। সামি এখন ভাবছেন, তিনি কী করবেন? তিনি কি ছবিকে জানাবেন মিহিরের কথা? মিহিরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের পরিণতি যা-ই হোক, ছবির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা তো ভালো যাচ্ছে না। ছবিকে বললে আবার সবাই সামিকে বলবেন প্রতারক। বলবেন, তিনি ছবির সঙ্গে এত দিন টাইম পাস করলেন। কিন্তু সামি তো ছবিকে ভালোবাসতেন, টাইম পাস করার মতোও কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। মিহিরকে দেখার পর থেকে ভালোবাসা চলে গেছে। এখানে সামির দোষটা কতটুকু?
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি যখন বারবার সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পর সেই সম্পর্ক ভেঙে নতুন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন আমাদের অবশ্যই ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্বে সমস্যা আছে। তাঁর মাঝে অতটুকু সামাজিক বা ব্যক্তিগত দক্ষতা নেই যে তিনি একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন। আমরা বলতে পারি ওই ব্যক্তি তাঁর আবেগ, অনুভূতি খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। তিনি খুব সহজেই মিশে যেতে পারেন নতুন মানুষের সঙ্গে, জড়িয়ে পড়তে পারেন নতুন সম্পর্কে, কিন্তু সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারেন না। তিনি বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন।’
তবে এমন নয় যে ব্যাপারটা ওই ব্যক্তি বহুগামী, তাই তিনি বারবার সম্পর্ক বদল করেন। বহুগামিতা আর বারবার কতগুলো অস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করার মাঝে একটা পার্থক্য আছে। আহমেদ হেলাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে একটা সুস্থ সম্পর্ক চালিয়ে আসা অনেক লোকও আছেন, যিনি বহুগামী। একজন মানুষ বহুগামী কি না আর তিনি বারবার সম্পর্ক বদল করার রোগে ভুগছেন কি না, এই দুটি জিনিসকে এক সঙ্গে করে দেখলে হবে না।’
এ ধরনের আচরণের ব্যাপারে একজন মানুষের বেড়ে ওঠাও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী। তাঁর নিজের জীবনে দেখে আসা সম্পর্কগুলো হয়তো তাঁকে সেই তুষ্টি বা বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে পারেনি। তাই তিনি নিজের তৈরি করা সম্পর্কগুলো নিয়ে থাকেন অনিশ্চয়তায়। একটা সম্পর্ক তাঁর বেশি দিন ভালো লাগে না। বারবার সম্পর্ক বদল করেন। একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যে ধৈর্য, মানসিক অবস্থা দরকার, তাঁর সেটা নেই। এ ধরনের মানুষের সঙ্গে যে কোনো ধরনের সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যদেরও সচেতন থাকতে হবে। আহমেদ হেলাল এ ব্যাপারে বলেন, ‘কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর আগে আপনি যদি তাঁর অতীত ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারেন, তাঁর বারবার সম্পর্ক বদল করার অভ্যাস আছে, তাহলে সম্পর্কে জড়ানোর আগে আপনার ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত। দরকার হলে তাঁর সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি একবার কথা বলে নিন।’
সুখী জীবনযাপনের জন্য একটা সুখী সম্পর্কও অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গড়ে তোলা সম্পর্কগুলোকে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা আরেকজন মানুষের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। যত দিন ভালো লাগল সম্পর্কটা আঁকড়ে ধরে রাখলাম, ভালো না লাগলে সম্পর্ক ভেঙে দিলাম—এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো।


SHARE THIS

Author:

Facebook Comment

0 comments: